এস এম খালিদ হোসেন:
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে।
প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, যে কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশ আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১ মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। ৩ মার্চ তিনি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাতœক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এই পটভূমিতেই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়। পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।
সেদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হন। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ময়দান ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। শ্লোগান ছিলো ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।’ উপস্থিত জনতাকে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আধা ঘন্টারও কম সময়ের ভাষণে ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলো বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা। স্বাধীনতার যে ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তা বিদুৎ গতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রকৃতপক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে আজকের দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ৭ মার্চ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকন্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিলো মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।’
সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। ঐতিহাসিক ৭মার্চে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’