থানার বাউ্ন্ডারী দেওয়াল ঘেষে নির্মান কাজ করার অপরাধে ৭ঘন্টা আটক থাকার পরে ছাড়া পেয়ে রাত ১২টায় আত্নহত্যা পাপন সাহা (২৪) নামে এক যুবকের।
মাত্র ৬ ইঞ্চি জমির জন্য সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা-৭ঘন্টা থানায় আটক থাকার অপমান সহকরতে না পেরে আত্মহত্যার মত পথ বেঁছে নিয়েছে পাপন । নিহত পাপন সাহা গোয়ালন্দ রেলস্টেশন এলাকার মৃত অশোক সাহার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫জুন বৃহস্পতিবার রাত ১২টায়।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনের পাশে ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার সীমানা প্রচীর সংলগ্ন রেলের জমিতে দোকানসহ বসত ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে পাপন সাহা ও তার পরিবার। সম্প্রতি থানার সীমানা প্রাচীরের উপরে ইটের দেয়াল তুলে বসত ঘর সম্প্রসারনের কাজ শুরু করে পাপন সাহা।
বিষয়টি থানা পুলিশের নজরে আসলে পাপন সাহাকে বৃহস্পতিবার গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান থানায় ডেকে নেয়। একপর্যায়ে থানার সীমানা প্রচীর থেকে একফুট দুরে ঘর নির্মাণের মুচলেকা নিয়ে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয় পাপন সাহাকে। ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইলেকট্রিক তারে জড়িয়ে আত্মহত্যা করে পাপন সাহা। এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, একদিকে থানার বাউন্ডারী থেকে দুরে ঘর নির্মাণের চাপ পুলিশের অপরদিকে ওই ভাবেই ঘর নির্মাণের চাপ পরিবারের। এতে হতাশ হয়ে পাপন সাহা আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কোমল কুমার সাহা জানান, পাপন সাহাকে থানা হেফাজতে রাখার খবর শুনে বৃহস্পতিবার দুপুরেই আমি থানায় যাই। কিন্তু থানায় ওসিকে না পেয়ে ফোনে কথা বলি। এসময় তিনি জানায়, আমি এসে পাপনের সাথে কথা বলে ছেড়ে দিব। পরবর্তীতে বিকেলে আমার ছেলেকে পাঠালে ওসি মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। তিনি আরো জানান, রাত পৌনে ১০টার দিকে পাপন আমাকে ফোনে জানায়, ওসি থানার বাউন্ডারী ওয়াল থেকে একফুট দুরে ঘর তুলতে বলেছেন। এসময় আমি তাকে বলি, ‘ওসি সাহেবের সাথে আমি কথা বলব, তুমি ৬ ইঞ্চি দুরে ঘর নির্মাণ কাজ কর।’ এরপর রাতে পাপনের আত্মহত্যার সংবাদ শুনি। এসময় তিনি নিশ্চিত করে বলেন, আমি ও আমার ছেলে সার্বক্ষনিক পাপনের খোঁজ-খবর রেখেছি, পুলিশ পাপনের সাথে কোন প্রকার দূর্র্ব্যবহার করেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইউনুছ মোল্লা জানান, পাপন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আমাকে জানায়, থানা থেকে তাদের ঘর নির্মাণ কাজে বাঁধা দিচ্ছে। আমি সরেজমিন এসে দেখতে পাই, থানার বাউন্ডারী ওয়ালের সাথে তারা ঘরের দেয়াল তুলেছে এবং উপরের টিন অনেকখানি থানার সীমানার মধ্যে ঢুকে গেছে। এসময় আমি তাদের পরামর্শ দেই, থানার বাউন্ডারীর ভেতর থেকে স্থাপনা সরিয়ে আনার জন্য।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তখন আমি মৌখিক ভাবে এভাবে ঘর তোলার বিষয়ে নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমার কথা না রাখায় বিষয়টি আমি ওসি স্যারকে অবগত করি। তিনি পাপন সাহাকে থানায় ডেকে নিয়ে আসেন। এসময় জরুরী একটি অভিযানে আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি। পরবর্তীতে থানায় ফিরে মুচলেকা নিয়ে পাপন সাহাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে পাপন সাহার মা পুষ্প রানী সাহা জানান, পুলিশ আমার ছেলেকে থানায় আটকে রাখায় অভিমান করে সে আত্মহত্যা করেছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, পাপন সাহা থানার বাউন্ডারী ওয়াল ঘেষে স্থাপনা নির্মাণ করছিল।তাকে আমার তদন্ত ওসি নিষেধ করার পরেও তিনি শোনেন নি। পরে তাকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে থানায় ডেকে আনা হয়।পরে পাপন সাহাকে থানা হেফাজতে রেখে জরুরী পদ্মা নদীতে আমারা একটি অভিযানে যাই। সেখান থেকে ফিরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তার সাথে কোন প্রকার খারাপ আচরন কেউ করেনি। তাকে শুধু বলা হয়েছে থানার বাউন্ডরী ওয়াল থেকে অন্তত এক ফুট দুরে স্থাপনা নির্মাণ করতে। এ কারণে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে তা বিশ্বাস করা যায়না। তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
নাম প্রাকশে অনইছুক স্থানীয় একজন বলেন একজন পাপন আত্নহত্যা করার আগে ওসি আশিকুর রহমানকে ফোন করে বলেছে যে আমি আত্নহত্যা করছি আধাঘন্টা পড়ে এসে আমার লাশ নিয়ে যাবেন।যে কারনে থানা ওসি পাপনকে বাচাতে তার বন্ধু আকাশ সাহা-কে ফোন করে পাপনের বাড়িতে পাঠায়।