খন্দকার রবিউল ইসলাম, নিউজ রুম এডিটর রাজবাড়ী টুডে: বকেয়া জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধ না করায় বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সেবা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল: এ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী পাম্পে বাকি পড়েছে ২১ লাখ টাকা। সে কারণেই তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাম্প কর্তৃপক্ষ। যে কারনেই গত ২১শে ফেব্রুয়ারী থেকে ২১ দিন যাবত বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের দুটি এ্যাম্বুলেন্স সেবা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে বার বার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
রাজবাড়ী জেলার ১২লক্ষ মানুষের এক মাত্র ভরসা সদর হাসপাতাল-আর এ হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র দুটি এ্যাম্বুলেন্স: আবার সেই সরকারী এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় রোগীদের বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে করে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর ও ঢাকায় চিকিত্সার জন্য নিয়ে যেতে হচ্ছে স্বজনদের। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় তিনগুণ।
সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সের চালক মাইনউদ্দিন বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ভাড়া নেওয়া হয় মাত্র ১০ টাকা। সে অনুযায়ী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া-আসায় ভাড়া ৬৬০ টাকা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত চার হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে গুরুতর রোগী বহন করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপরেও ওইসব এ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসে ফরিদপুর পর্যন্ত দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত ৭/৮ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে দরিদ্র রোগীরা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়ছেন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স চালু থাকলে গরীভ রোগীরা আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন।
হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের সরকারি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্স দুটি চালু হলে রাজবাড়ীবাসীর অনেক উপকার হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, শিগগিরই পাম্পের বাকি টাকা পরিশোধ করে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হোক। যদিও সচল থাকলেও বিভিন্ন অযুহাতে ফরিদপুরের বাইরে যান না এ্যাম্বুলেন্স চালাকরা। তার পরেও এত টাকা বাকি পরে কি ভাবে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের..?
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ভাই মতিন মোল্লা বলেন, এ হাসপাতালে সরকারী ভাবে ২টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। জেলার সাধারণ মানুষেরা স্বাস্থ্য সেবার জন্য জরুরী রোগীকে ফরিদপুর বা রাজধানী ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারী এ্যাম্বুলেন্স স্বল্প খরচে ভাড়া করে।কিন্তু হাসপাতালের দুটি এ্যাম্বুলেন্সই বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের অনেক ভোগান্তিতে পরেছে। কিন্ত নজর নেই কারো।
রামকান্তপুর ইউয়িন থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মোঃ ইব্রাহিম মোল্লা জানান, তেলের সংকট দেখিয়ে ২১দিন যাবত সরকারী এ্যাম্বুলেন্স দু’টি বন্ধ রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত যেন এর সমাধান করে এ্যাম্বুলেন্স দু’টি পূণরায় চালু করা হয়।
একাধীক রোগীর স্বজনরা জানায়, দিনের বেলায় হয়তো বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে রোগীকে ফরিদপুর/ঢাকা নেয়া যায়। কিন্তু গভীর রাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আর কোন ব্যবস্থা নেই। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স যখন মানুষ ভাড়া করে তখনই তো তার ভাড়া পরিশোধ করা হয়। কিন্তু তেলের টাকা বাকি পড়ে কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসা রতন প্রামানিক বলেন, রোগী নিয়ে এসেছি। তাকে জরুরীভাবে ফরিদপুরে রেফার করেছে। এখন শুনছি সরকারী এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ। বড় বিপদে পড়ে গেলাম।
হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মাইনউদ্দিন মোল্লা বলেন, তেলের টাকা বাকি পড়ায় পাম্প থেকে তেল দিচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রেখেছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দেখে আমার নিজেরও খারাপ লাগছে।
সদর হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোফাজ্জেল হোসেন জানান, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তেলের পাম্পে বাকী ১৪ লক্ষ ৩২ হাজার ২৫৬ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাকী ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার ২২০ টাকা। দুই অর্থ বছরে মোট বাকী পড়েছে ২১ লক্ষ ১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এ বিষয়ে গত ৭ই ফেব্রুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারী তেলের পাম্পে অনুরোধ করে বলা হয়েছিলো যেন জনস্বার্থে তেল সরবরাহ চালু রাখেন। তা স্বত্ত্বেও পাম্প থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় এ্যাম্বুলেন্স দু’টি বন্ধ আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দীপক কুমার বিশ্বাস জানান, এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাশর্^বর্তী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকায় অনেক রোগী রেফার করা হয়ে থাকে। এ জন্য অন্যান্য জেলার তুলনায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স বেশি চলাচল করে। এতে তেলের পরিমাণও বেশি লাগে। পাম্পে তেলের টাকা বাকী পড়ায় তারা তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুতই আমরা এর সমাধান করতে পারবো বলে আশা করছি।
এবিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলী আহসান তুহিন জানান, আমাদের এ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকার কারনে জরুরী রোগীদের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রসহ অন্যান্য সরকারী দপ্তরের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে রুগীদের জন্য।