বাংলাদেশে সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নামে একটি নাগরিক সংগঠন নভেম্বরে বিক্ষোভের যে কর্মসূচি নিয়েছে, বিরোধী দল বিএনপি তাতে সমর্থন দিয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ব্যানার ছাড়া তাদের নেতা-কর্মীরা ঐ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারে।
গতকালই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো সুন্দরবনের কাছে ভারত ও বাংলাদেশে যৌথ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান পরিস্কার করেছেন।
তবে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি বলেছে, বিএনপির পরিকল্পনার সাথে তাদের আন্দোলন বা কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যখন তাঁর দল এবং জোটের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরলেন। তার পরদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমলাম আলমগীর বললেন, সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ না করার দাবির ব্যাপারে শেষপর্যন্ত সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেজন্য একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পর দল বা জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেবেন।
তবে বিএনপি এখন তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেবে বলে উল্লেখ করেছেন মি: আলমগীর।
তিনি বলছিলেন, “খুলনায় আমাদের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, সেখানে জাতীয় কমিটির কোনো কর্মসূচি হলে তাতে অংশ নিতে। ঢাকাতেও আমরা অংশ নিতে পারি। দলের ব্যানার ছাড়া অন্য সব মানুষের মতো আমরাও জাতীয় কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারি”।
পাঁচ বছর ধরে এই আন্দোলন করে আসছে বামপন্থী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সমমনাদের ফোরাম তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে চুক্তি হওয়ার প্র্রেক্ষাপটে তাদের আন্দোলন একটা মাত্রা পেয়েছে।
এতদিন পর এসে এই ইস্যুতে বিএনপি মাঠে নামার কথা বলছে।
এখন ইস্যুটি বা জাতীয় কমিটির আন্দোলন একটা রাজনৈতিক চেহারা পেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
জাতীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ পরিস্থিতিটাকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলছিলেন, “কোনো আন্দোলনে জনমত তৈরি হলে তখন বড় দলগুলোর তাতে অংশ নেয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় ফুলবাড়ি কয়লাখনি নিয়ে আমাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল। এখন আবার বিএনপি তা করছে”।
আনু মোহাম্মদ আরও বলেছেন, “জনগণ সচেতন আছে, কারা ক্ষমতায় থেকে কি করেছে? ফুলবাড়িতে আমাদের আন্দোলনে কারা গুলি করেছে। বড় দলগুলো কারা কী ভূমিকা রাখছে। ফলে আমাদের আন্দোলন বিভ্রান্ত হবে না”।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এই ইস্যুতে মাঠে নামছে।
এছাড়া যদিও জাতীয় কমিটি বলেছে, বিএনপি তাদের মতো কর্মসূচি নিতে পারে। এর সাথে তাদের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু দেশের অন্যতম একটি প্রধান দল যখন সেই আন্দোলনের স্বপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, তখন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে পারে বলা যায়। সরকার অবশ্য তা মানতে রাজি নয়।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এই ইস্যুতে মাঠে নামছে।
“এ নিয়ে আমরা একটুও চিন্তিত নই। কারণ পরিবেশগত সব বিষয় খতিয়ে দেখে এবং সব ব্যবস্থা রেখেই আমরা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি”।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে চুক্তি সই হওয়ার পর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এখন অন্য কোন বিষয় বিবেচনার সুযোগ নেই বলেই তিনি উল্লেখ করেছেন।
খবর: বিবিসি বাংলা, কাদির কল্লোল।