আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবু মির্জা ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদ মান্নান মিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক ভিজিএফ কার্ডধারীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কার্ড রেখে দিয়ে চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ কমিটির নয়জন সদস্য রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুরমহাল আশরাফীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসময় রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঈদের সময় ভিজিএফের চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুঃস্থ মানুষেরা। এ সকল বিক্ষুব্ধ দুঃস্থ মানুষেরাও উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কাছে গিয়ে বসন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবু মির্জা ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান মিয়ার বিচারের দাবি করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বসন্তপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ৪৪৩ জন দুঃস্থ পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে ভিজিএফ চালের কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত শনিবার সকালে দুঃস্থ মানুষেরা ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল উত্তোলনের জন্য গেলে চেয়ারম্যান বাবু মির্জা ভিজিএফের চুড়ান্ত তালিকার ব্যক্তিদের চাল বিতরণের মাস্টাররোলে টিপসই গ্রহণ করার জন্য তার ঘনিষ্টজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মিয়াকে দায়িত্ব দেন। সে সময় মান্নান মিয়া চাল নিতে আসা প্রায় ৫ শতাধিক দুঃস্থ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তাদের কার্ড রেখে দেন। পরবর্তীতে এসব কার্ডধারীদের ভিজিএফের চাল না দিয়ে উল্লেখিতরা তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
ভিজিএফের চাল বঞ্চিত বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা দিনমজুর গৃহবধূ দীপালী বেগম জানান, তিনি ইটের ভাটায় দিন মজুরের কাজ করে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনো রকম দিন যাপন করেন। ঈদের সময় ভিজিএফ কার্ড পেয়ে অনেক খুশি হয়ে ছিলেন তিনি। খুশি মনে চাল উঠাতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর মান্নান মিয়া তাকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কার্ড রেখে তাকে তাড়িয়ে দেন।
এ প্রতিবেদকের কাছে দীপালী বেগমের মতো এমন অভিযোগ করেছেন আরও অনেকেই। এ বিষয়ে বসন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাবু মির্জার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগটি নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুক্র ও শনিবার দুই দিনে আমরা ২ হাজার ৪৪৩ জন ভিজিএফ কার্ডধারীদের মধ্যে চাল বিতরণ করেছি। তবে প্রায় দেড় শতাধিক কার্ডধারী চাল নিতে না আসলে তাদের চাল সর্বসম্মতিক্রমে ইউনিয়নের অন্যান্য দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত মান্নান মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
পবিত্র ঈদে ভিজিএফের চাল পায়নি ৫শ দুঃস্থ মানুষ এ খবর পেয়ে রোববার দুপুরে বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন মহিলা পরিষদের বারান্দায় বসে চালের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে এ সময় পরিষদে চেয়ারম্যান বা ইউপি সচিব কেউই ছিলেন না।
চাল নিতে আসা বাজিতপুর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, শনিবার তিনি কার্ড নিয়ে চাল উত্তোলনের জন্য এলে তার কার্ড রেখে রোববার তাকে আসতে বলা হয়। রোববার সকাল থেকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে এসে বসে আছেন কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা ছাড়া কাউকে দেখছেন না।
এদিকে, এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নুরমহাল আশরাফী বলেন, বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ কমিটির সদস্যদের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।