নাজমুল হুদা একজন ক্রিকেট কোচ। তার স্ত্রী ঢাকার জজ আদালতের উকিল। গর্ভবতী স্ত্রীকে ভাল সেবাযত্নের জন্য ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রেখেছিলেন মি. হুদা। সেখানের এক হাসপাতালেই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই, মোটে ৫ মাস ২২ দিনের মাথায় সন্তান প্রসব হয়ে যায় মি. হুদার স্ত্রীর। কর্তব্যরত চিকিৎসক সদ্য-ভূমিষ্ঠ শিশুটির নাড়ী খুঁজে না পেয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটিকে দাফনের জন্য কার্টনে পুরে বেঁধেছেঁদে পাঠিয়ে দেয়া হয় গোরস্থানে।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু গোল বাঁধল শিশুটিকে গোর দিতে গিয়ে। গোর দেয়ার জন্য কার্টন খুলে শিশুটিকে বের করা হলেই সে তারস্বরে কেঁদে ওঠে। দ্রুত তাকে আবার ফিরিয়ে নেয়া হয় সেই হাসপাতালে, যেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন। হাসপাতালটির নাম, ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল। শিশুটির চাচা শামীম উল হক বলছিলেন, তার সদ্যোজাত ভাইঝির মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার এই কাহিনি।
গত বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনাপ্রবাহ এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে, ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে।
অবশ্য অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া এই শিশুটির শরীর ভাল নেই। ফরিদপুরের হাসপাতালে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল তাকে।
সেখানকার ডাক্তার বলেছেন, তাকে ভাল চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু শিশুটিকে নিতে হবে আকাশপথে। সড়কপথের ঝক্কি তার ছোট্ট প্রাণে সইবে না। এই খবরটিও প্রকাশিত হয় পত্রিকায়।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত এই খবর শনিবার দুপুরেই ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে বাংলাদেশের একজন ফেসবুক সেলেব্রিটি সোলায়মান সুখন লেখেন, শিশুটিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসতে চান তিনি।
এজন্য তার এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী বন্ধু ব্যয়ভার বহন করতেও সম্মত হয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির পিতামাতার খোঁজ পেয়ে যান মি. সুখন।
বিকেলেই মি. সুখন নিজে হেলিকপ্টারের আরোহী হয়ে চলে যান ফরিদপুর এবং তার কিছুক্ষণ পরে শিশুটিকে তার পিতা এবং চাচা শামীম উল হককে সহ উড়িয়ে নিয়ে আসেন ঢাকায়।
মি. সুখন বিবিসিকে বলেন, “বলতে পারেন দু’ঘণ্টার মধ্যেই সব কিছু হয়ে গেছে। পাওয়ার অব ইন্টারনেট!” অবশ্য ঢাকায় পৌঁছালেও সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া হয়নি ‘গালিবা হায়াত’ নামের এই নবজাতকটির। ফরিদপুর থেকে দ্রুত ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত আসা গেলেও যানজটের কবলে পড়ে শহরে ঢুকতে লেগে যায় অনেক সময়।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য শিশুটিকে ভর্তি করা হয় ঢাকার বেসরকারি স্কয়ার হাসপাতালে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেছেন ডাক্তারেরা।
অবশ্য শিশুটির চাচা শামীম উল হক বলছেন, তারা এখন পর্যন্ত জানেন না কোন মহৎহৃদয় মানুষ দিয়েছেন হেলিকপ্টারের ভাড়া। সূত্র:বিবিসি বাংলা