স্টাফ রিপোর্টার, রাজবাড়ী টুডে: এই প্রথম নজির বিহীন কড়া পুলিশী নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩ অক্টোবর শনিবার বেলা ১২টা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সভা শুরু হয়। দীর্ঘ ৪ঘন্টা (বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে সভায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ।
সভায় গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভার রেজুলেশনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এবং তার অনুসারী নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেননি।
সভা শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আজকের মিটিংয়ে সাংগঠনিক বিষয়াদীসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের শত্রæ না, আমরাও পুলিশের বিপক্ষে না। আমরা সবাই যেমন ভালো না-তেমনি সব পুলিশও ভালো না। পুলিশে ভালো-মন্দ সব ধরণেরই লোক আছে। আমরা ভালো পুলিশের বিপক্ষে না।
সামগ্রিকভাবে পুলিশের পক্ষে। কিন্তু যারা খারাপ, তারা আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে অন্যভাবে দেখে। সেক্ষেত্রে আমাদেরও ভিন্ন ধরণের চিন্তা-ভাবনা আছে। আমরা পুলিশকে অনেক সহযোগিতা করেছি। আমি জেলা পুলিশকে ২টি পিকআপ গাড়ী দিয়েছি। কালুখালী থানা ও গান্ধিমারা হাইওয়ে থানার পুরো স্ট্রাকচারটাই আমাদের করে দেয়া। কালুখালী থানার জায়গাটার ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি। পুলিশকে কখনো ভিন্ন চোখে দেখিনি। সবসময়ই তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী ‘পুলিশকে ইনফর্ম করার ব্যাপারে’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজকের পুলিশ আমরা আনিনি। জেলা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে পুলিশ লাগবে কেন ? হয়তো কেউ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ এনেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আকবর আলী মর্জি বলেন, দলের একজন এমপি পুলিশকে না রাখতে চাইতেই পারেন। কিন্তু কেন রাখবেন না তার একটা যুক্তসঙ্গত কারণতো থাকতে হবে। আপনি এমপি, আপনার পাওয়ার আছে, আপনি ঢাকায় ডেকে নিয়ে যাবেন-সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখবেন এটা তো হয় না। এমপি জিল্লু গং এর কারণে আজকের মিটিংয়ের কোন রেজুলেশন হয়নি। একপর্যায়ে মিটিংই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এ জন্য জিল্লুল হাকিমকে কিছু কড়া কথাবার্তা বলেছি। যেসব কথা পার্লামেন্টে বলা যায় না।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের (এমপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর পরিচালনায় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আকবর আলী মর্জি, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, আব্দুস সাত্তার, এডঃ গণেশ নারায়ণ চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডঃ রফিকুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিয়ার আমজাদ হোসেন, রাজবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডঃ উজির আলী শেখ, পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএফএম শফিউদ্দিন পাতা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ (বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণসহ) উপস্থিত ছিলেন, যাদের সংখ্যা ৭৪।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের আগে সকাল থেকেই থানা, ডিবি, ডিএসবি ও সদর ফাঁড়িসহ বিভিন্ন ইউনিটের অর্ধ-শতাধিক পুলিশ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় কার্যতঃ ঘিরে রাখে। তাদেরকে দলীয় কার্যালয়, আশেপাশের এলাকা, এমনকি দলীয় কার্যালয়ের দোতলায় সভাস্থলের বারান্দা দিয়েও ঘুরাফিরা করতে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দলের জেলা কমিটির মিটিংয়ে এ ধরণের পুলিশী উপস্থিতি নজির বিহীন, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি।