স্টাফ রিপোর্টার, রাজবাড়ী টুডে: কদিন পরই নির্বাচন, সারা দেশে বয়ছে এখন ভোটের হাওয়া। খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চবিত্ত সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী অমেজ। ভোট প্রার্থনায় পাড়ায়-মহল্লার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাত-দিন খেটে চলেছেন তারা দলের নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজবাড়ী-১ আসনে প্রচার প্রচার প্রচারনার দৌড়ে সব দিকে থেকে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চারবার নির্বাচিত কাজী কেরামত আলী। রাজবাড়ীতে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রচার এখন তুঙ্গে। তার অনুসারী নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট নন, সমাজের এমন কিছু প্রভাবশালী লোকজনও উন্নয়নের পক্ষে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রচার আরো বেগবান হচ্ছে।
এলাকার সুধীজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবহেলিত ও চরমপন্থী-কবলিত রাজবাড়ী কে গত দশ বছরে উন্নয়নের মডেল এলাকা হিসেবে তৈরি করেছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বর্তমান এমপি কাজী কেরামত আলী।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীসহ একাধীক নেতা বলেন, যুগ যুগ ধরে অবহেলিত রাজবাড়ী জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এসরকারের আমলে, ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন নৌকা প্রার্থীকেই উন্নয়নের প্রতীক বলে মনে করছে। তাই ভিন্ন কোনো প্রার্থী এলো কী গেল, এদিকে নজর নেই তাদের। উন্নয়নের সুফলভোগী সাধারণ মানুষ এখন দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এমপি কাজী কেরামত আলীর পক্ষে একাট্টা। তাই প্রচার-প্রচারণায় ভিন্ন মার্কা বা প্রার্থীর কোনো তৎপরতাকে সাধারণ মানুষ আমলে নিচ্ছে না। রাজবাড়ী সদর-গোয়ালন্দ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর-সভার অধিকাংশ এলাকার মানুষ কাজী কেরামত আলীকেই এমপি হিসেবে দেখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল দেখছে না, এলাকার উন্নয়নের একমাত্র রূপকার হিসেবে ব্যক্তি কজী কেরামত আলীর কথাই এখন ঘুরেফিরে সাধারণের মুখে মুখে আছে বলে মনে করছেন রাজবাড়ী ৭৫ পরবর্থী জেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরা এই নেতা।
এদিকে বিএনপির-ঐফ্যন্ট র প্রার্থী রাজবাড়ী ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং পৌর-সভার ৩বারের মেয়র আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। সে কারনেই রাজবাড়ীতেও তার একটি শক্ত অবস্থান রয়েয়েছে। ভোট যুদ্ধে মূলত লড়াই হবে কাজী কেরামত আলীর তার সাথে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের পক্ষের তেমন প্রচার এখনো চোখে পড়েনি। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম নমিনেশন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যেই ছিলেন। এলাকায় প্রচার ছিল তিনি এবার নমিনেশন পাবেন না।
যদিও রাজবাড়ীতে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও সহ-সভাপতি এড: আসলাম মিয়েকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এনিয়েও নেতামর্কীদের মধ্যে হতাশা ছিলো। পরে সর্বশেষ চুড়ান্ত প্রার্থী করা হয় আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম কে।
মনোনয়নবঞ্চিত নেতা এড: আসলাম মিয়া, আরেক সহ সভাপতি এডঃ এম খালেক ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর-রশিদ গ্রুপের কোন নেতাকর্মীকে এপর্যন্ত দেখা দেখা যায়নি ধানের শীষের পক্ষে প্রচারনায় নামতে। তাছাড়া দলের এমন দীর্ঘদিনের দলীয় কেন্দোল এখনো মেটাতে পারেনি দলের সভাপতির দায়ীত্বে থাকা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম।
অন্যদিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটিতে আলী নেওয়াজ মহামুদ খৈয়মের লোকজনকে সঠিক ভাবে পদায়ন করা হয়নি। এ নিয়ে খৈয়ম ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখালেও তার লোকজনের কোনো হিল্লা করতে পারেননি। এ অবস্থায় তার পক্ষে প্রচারের জন্য এখন কর্মী-সংকট দেখা দিয়েছে। তার উপড় আছে গ্রেফতার আতংক ফলে তিনি ঠিকমতো মাঠেও নামতে পারছেন না।
প্রার্থী হিসেবে বিএনপির টিকিট পেয়েলেও তিনি নির্বাচনের মাঠে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি সবাইকে নিয়ে মাঠে নামতে পারেন কি না এ নিয়ে শঙ্কায় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। তার ওপর মনোনয়নবঞ্চিত অংশের নেতারা খৈয়মের পক্ষে মাঠে নেমে কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখে সাধারণ মানুষের মনে, এমন প্রশ্ন রয়েছে।
বিএনপির এই প্রার্থী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সবাইকে এখনো ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আদৌ পারবেন কি না, সে সংশয় রয়েছে। তাই ধানের শীষের পক্ষে রাজবাড়ীর অধিকাংশ এলাকায় প্রচার প্রচারনা চালাতে পড়েছে না। যার ফলে হতাশ দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপির কর্মী প্রতিবেদককে জানান, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম নমিনেশন পাওয়ার পর, আজ পর্যন্ত আমাদের কে ডাকেন নি। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এ অবস্থায় তিনি কখন প্রচারে নামবেন আর কখন মাঠ গোছাবেন, তা কেবল তিনিই বলতে পারেন।’ এ ছাড়া আসলাম মিয়া নমিনেশন না পাওয়ায়, খালেক, আসলাম ও হাসরুণ গ্রুপের সমর্থকরা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে সুত্র মতে জানা গেছে।
বিএনপি ও ঐক্যফন্ট মনোনীত প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম দলীয় কেন্দোলের বিষয়ে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। দলের মধ্যে একটু ভুল বোঝা বুঝি থাকতে পারে এমন সমস্যা আওয়ামী লীগের মধ্যেও আছে। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন সহ সকলের সাথ কথা বলেছি তারা বলেছে আমার সাথে থেকেই নির্বাচন করবে। আশা করি আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝা বুঝি ছিলো তা এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
প্রচার প্রচারনার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচার কি ভাবে করবো রাতের আধারে আমাদের পোস্টার ছিড়ে ফেলছে। আমাদের প্রচার মাইক ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমার বাড়ী পুলিশ ঘিরে রাখছে। রাজবাড়ীর সকল শ্রেণী পেশার মানুষ জানে গত ১১/১২/১৮ তারিখে রাজবাড়ী বাজার পৌর বিএনপি’র উদ্যোগে বিকাল ৩.০০ টায় এক পথসভার আয়োজন করা হয়। সন্ত্রাসীরা সেখানেও সশস্ত্র হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং বহু নেতা কর্মিকে আহত জখম করে। দূর্ভাগ্যজনক যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া হলেও পুলিশ হামলা চলাকালিন সময়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পলন করে। হামলা চলাকালিন সময়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে টেলিফোন করে বারবার নিরাপত্তা বিধানের অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও কোন কার্যকর ব্যাবস্থা করা হয় নাই। আমাদের নিরাপত্তার অবাভ যার ফলে আমরা কোন প্রচার প্রচারনা চালাতে পারছিনা।
পুলিশ আমাকে কোন রকম সহযোগিতা করছে না। বিষয়টি একাধিক বার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারের নিবাচনী সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। উপরন্ত পুলিশ একের পর এক আমারদের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।এছাড়াও আমার বাড়ির সামনে থেকে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে আমার কাছে কেউ আসতে সাহস পাচ্ছে না।
রাজবাড়ী জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, ভোটকেন্দ্র, কক্ষ, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজবাড়ী জেলার ২টি আসনে ৩১২টি কেন্দ্র, ১ হাজার ৫৪২টি ভোট কক্ষ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের জন্য ৪ হাজার ৯৩৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে ৩১২ জন প্রিজাইডিং অফিসার,১ হাজার ৫৪২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার,৩ হাজার ৮৪ জন পোলিং অফিসার আছেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন। যার মধ্যে পুরুসষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৯০ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৪২৯ জন। রাজবাড়ী-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছে ৫৯ হাজার ৫৫০ জন। রাজবাড়ী জেলার মোট-ভোটার ৮০৯০৯২ জন।