মিরাজ হোসেন গাজী:
মোকলেসুর রহমান। কারওয়ানবাজারে ARTISAN নামে একটা সি এ ফার্মের কর্মকর্তা।
১ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আগারগাঁও থেকে অফিসে রওনা হন। এটাই পরিবারের সাথে মোখলেসের শেষ দেখা।
দুপুরে খবর আসে অফিসে যান নি তিনি। তখনই পরিবারের পক্ষ থেকে মোখলেসের দুটি মোবাইল নম্বরেই (01911659098, 01790903724) যোগাযোগের চেষ্টা। কল বাজে কিন্তু অপর পাশ থেকে রিসিভ হয় না। এভাবে বিকাল তিনটার পর বন্ধ হয়ে যায় নম্বর দুটি।
এরপর থেকেই নাওয়া খাওয়া বন্ধ পরিবারের। শেরে বাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয় (জিডি নম্বর ৭০/০১.১১.১৬)। মোখলেসের খোঁজ করতে লিখিত আবেদন জানানো হয় RAB-2 এর আাগারগাঁও ক্যাম্পে।
জানানো হয় আত্মীয় ও পরিচিত জনদের। একাধিক সিনিয়ক ক্রাইম রিপোর্টারকে (টিভি) দিয়ে ফোন করানো হয় RAB ও পুলিশের উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাকে। RAB -2 এর ক্যাম্প প্রধান এবং পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম)। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে অনুরোধ করা হয় ডিসি তেজগাঁওকে।
এর মধ্যে যেখানেই কোন অপহরণ, অপমৃত্যু অথবা মৃতদেহ পাওয়ার খবর দেখেন গণমাধ্যমে, সেখানেই ছুটে যান পরিবারের সদস্যা। আর মোখলেসের স্ত্রীতো পাগলপ্রায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের একই দশা।
মোখলেসের মামা শ্বশুর জহির আহমেদ প্রতিমুহূর্ত যোগাযোগ করতে থাকেন সম্ভাব্য সব জায়গায়, যেখানে পাওয়া যেতে পারে একটু আশার খবর।
নিখোঁজ হওয়ার দিনই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, মোখলেসুর রহমানের মোবাইল ফোনটি সবশেষ অবস্থান মানিকগঞ্জে।
সেইসূত্রে মানিকগঞ্জের পরিচিত সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। সাংবাদিকরা সাধ্যানুযায়ী সব জায়গায় খোঁজ করেন। কিন্তু কোন তথ্য আসে না দিশেহারা পরিবারের কাছে।
এভাবেই চারদিন……….
শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানা এলাকার ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের পাশ থেকে পাওয়া যায় অজ্ঞাত এক মরদেহ।
খবরটি দেন বাংলাভিশনের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আকরাম হোসেন। জানান, মৃতদেহের বর্ণনা। তবে লাশটি তিন/ চার দিন আগের হওয়ায় চেহারা চেনার উপায় নেই।
নিখোঁজ মোখলেসের মামা শ্বশুর জহির আহমেদকে অজ্ঞাত লাশ পাওয়ার খবর দিলে ছুটে যান তিনি। এরই মধ্যে মানিকগঞ্জে আকরাম হোসেন, ইউসুফ হোসেন সহ অন্য সাংবাদিকরা অনেকটাই নিশ্চিত হন। এরপর ঘিওর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, লাশের সাথে পাওয়া মানিব্যাগে ভিজিটিং কার্ডে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। এই লাশটিই হতভাগ্য মোখলেসুর রহমানের।
একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার কাছে এটি একটি খবর মাত্র। জাতীয় টেলিভিশনে একটি শিরোনাম বা উভ(ছোট নিউজ)। পুলিশও তাদের খুচরা কাজের অংশ হিসেবে জিডিটি হয়তো ফাইলবন্দি করে রেখেছেন।
RAB হয়তো তাদের অনেক বড় বড় কাজের মাঝে ভুলেই গেছেন আবেদনটির কথা। আর RAB পুলিশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক যেই সাংবাদিকদের , তাদের অনুরোধও হয়তো হাসিমুখে গ্রহন করে পরে ভুলে গেছেন।
কিন্তু যেই পরিবার তাদের স্বজনকে হারালো, যেই স্ত্রী তার আশ্রয় স্বামীকে হারালেন, যেই মা তার সন্তানকে হারালেন, তাদের কথা কি কেউ ভাবছি?
যাদের দায়িত্ব এই মোখলেসদের নিরাপত্তা দেয়া, নিখোঁজ হলে সন্ধান দেয়া, অপহৃত হলে উদ্ধার করা, তারা কেউই কি ভাবছি মোখলেসতো আমার স্বজনও হতে পারতো।
জিডি করার পর থেকে লাশ পাওয়া পর্যন্ত একবারও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন নি RAB বা পুলিশের কোন সদস্য। জানা যায়নি তাদের কোন তৎপরতাও।
এই ঘটনা/ মৃত্যর ভবিষ্যৎ কি তাও হয়তো অনিশ্চয়তায় আটকে যাবে।
অনেক সফলতা আছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনের উদাহরণ শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে দেশবাসী।
মোখলেসদের জন্যকি একটু সময় দেয়া যায় না?
একটু কি, জিডিগুলো দ্রুত সময়ে তদন্ত করা যায় না?
সে যাই হোক, মোখলেসের পরিবারটা অন্তত লাশটিতো খুজে পেয়েছে। না পেলে হয়তো দায়িত্বে থাকাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখই নষ্ট হয়ে যেতো। এই বুঝি আসছে মোখলেস……….
লেখক: টিভি রিপোর্টার, বাংলাভিশন, ঢাকা।