স্টাফ রিপোর্টার, রাজবাড়ী টুডে: বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ৪ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন সিএনএন বাংলা টিভি’র সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরী (২৫)। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
২২শে সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর ২ নং আমলী আদালতে দন্ড বিধির ৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৪২৭/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ (২) ধারায় তিনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের টিএস আরাফাত হোসেন, নাজমুল হোসেন, আরটিও মাহমুদ হোসেন এবং টিএ এনামুল হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলার বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি’কে আদেশ দিয়েছেন।
সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীর মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, দৌলতদিয়া ঘাটের জ্যামকে কেন্দ্র করে তিনি তার সিএনএন বাংলা টিভিতে একটি নিউজ সম্প্রচার করেন। দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরী পারাপারের ‘প্রতিটি ট্রাক থেকে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশী টাকা নেয়ার’ রিপোর্ট করায় উল্লেখিত আসামীরা ক্ষুদ্ধ হয়।
পরবর্তীতে সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরী ভুক্তভোগী ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য সম্বলিত আরো কিছু ভিডিও ফুটেজ ধারণ করলে বিষয়টি জানতে পেরে আসামীরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়। এর জেরে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে উল্লেখিত আসামীসহ তাদের ভাড়াটিয়া অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত লোহার রড, কাঠের বাটাম, হাতুড়ি ইত্যাদি দেশী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ বক্স সংলগ্ন সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীর অফিসে গিয়ে তার কাছে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজগুলো ফেরত চায়। তিনি ভিডিও ফুটেজগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তার উপর হামলা চালায়।
এ সময় তারা সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীকে এলোপাতারীভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। সোহেল রানা চৌধুরীর আর্ত-চিৎকারে তার অফিস সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তার পিতা জাহাঙ্গীর চৌধুরী (দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি) এবং তার ২ জন কর্মচারী হাসান ও মুরাদ এগিয়ে এলে তাদেরকেও একইভাবে মারপিট করা হয়।
এর পাশাপাশি হামলাকারীরা সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীর অফিসে থাকা কম্পিউটার, ক্যামেরা, দেয়ালে টানিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরসহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করে।
এছাড়াও তারা সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীর ব্যবহৃত টেবিলের ড্রয়ারে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে শোরগোল শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তারা চলে যায়। যাওয়ার সময় প্রকাশ করে যায় যে, ভবিষ্যতে আমাদের কর্মকাÐে বাধা সৃষ্টি করলে এবং পূর্বের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজগুলো ফিরিয়ে না দিলে সোহেল রানা চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে খুন করে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দিবে।
আসামীরা চলে যাওয়ার পর সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরী ও তার পিতা জাহাঙ্গীর চৌধুরী স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন এবং অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসান ও মুরাদকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরী গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করতে গেলেও মামলা না নেয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর বিআইডবিøউটিসি’র সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) তোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরীসহ ৫ জনকে আসামী করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডবিøউটিসি’র ফেরী সার্ভিসের টিকেট বুকিং কাউন্টারে ‘প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়ায়’ উল্লেখিত ৪ কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ করা হয়।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক সোহেল রানা চৌধুরী বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার করে যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে ২ হাজার থেকে ২৫শত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। ট্রাকের চালক ও হেলপাররা বিআইডবিøউটিসি’র বুকিং কাউন্টার থেকে টিকেট নিতে গেলে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। আমি এ ব্যাপারে কিছু ভিডিও ফুটেজ ধারণ করলে আসামীরা জানতে পেরে আমার অফিসে চড়াও হয়ে ভিডিওগুলো ডিলিট করে দিতে বলে এবং আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
আমি ম্যানেজ না হওয়ায় আমাকে মারপিট করা হয়। ওই সময় আমাকে রক্ষা করতে গেলে আমার পিতা দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের ২ কর্মচারীকেও মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করার চেষ্টা করা হলেও তারা মামলা না নেয়ায় নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।