খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী টুডে: রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলার কারনে আলিম শেখ (৬) নামে এক শিশু মৃত্যু-শিক্ষকদের ও আছে কিছু দোষ অভিযোগ স্বজনদের।
নিহত পরিবার ও শিক্ষকরা ডাক্তারের অবহেলার অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দেড় ঘন্টা পার হলেও ফেইসবুক আর গল্পে ব্যস্ত থাকায় কোন ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেননি আহত আলিম শিশুটিকে। শিশুটি ধিরে ধিরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরছে আর ডাক্তার বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছে। যার কারনে মারাগেছে আলিম। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা হাসপাতালে জরো হয়ে ডাক্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাষায় স্লোগান দেন। এসময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে শিশু মৃত্যের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কর্তৃব্যরত চিকিৎসক অবহেলা করে থাকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলীপুর আরসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনী ছাত্র আলিম শেখ। শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের দোলনায় খেলা করতে গিয়ে দোলনা উল্টে বুকে আঘাত পাওয়ার পর রাজবাড়ী সরকারী হাসপাতালে নিয়ে আসে স্কুলের সহকারী কয়েকজন শিক্ষক ও আলিমের স্বজনেরা। হাসপাতালে এনে ভর্তি করার পর দেড় ঘন্টা পর্যন্ত ডাকাডাকি করেও কোন চিকিৎসকের দেখা পাননি তারা। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনে পৃথীবি ছেড়ে চলে যায় আলিম।
রোগীর স্বজনেরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্টার মনিজা হাসপাতালে বসেই ফেইসবুক খেলছিলেন, পাশাপাশি নার্সদের সাথে গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলেন। বারবার ডাকার পরও তিনি রোগীর কাছে যাননি যে কারনেই রোগর মৃত্য হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীর স্বজনেরা জানান, শনিবার সকালে ভর্তি করে বেলা বারটা পর্যন্ত তারা কেউই কোন ডাক্টারের দেখা পাননি। একটি সরকারী হাসপাতাল কিভাবে চলছে তার প্রশ্ন রাখেন।
আলিম রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মামুন শেখ ওরফে কছিমদ্দিনের ছেলে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে আলিমের বাবা কছিমদ্দিন শেখ বলেন, ‘সকাল ৯ টার দিকে আমি ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আলাদীপুর বাজারে আসি। বাজারের পাশেই স্কুলটি। এরমধ্যে খবর পাই আমার ছেলে স্কুলের খেলনা স্লিপারের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে। সাথে সাথে আমি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষককে সাথে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। সে সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন ডা. মনিজা। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে ৪০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত ডাকাডাকি করেলেও কোনো চিকিৎসক আমাদের ডাকে সারা দেয়নি। ডা. মনিজার কাছে আমরা বার বার গেলেও ওই ডা. তখন মোবাইল ফোন নিয়ে ফেসবুকে গল্প করায় ব্যস্ত ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বার বার ডাক্তাররের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলাম আমার ছেলেটিকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। তখনও আমার ছেলে কথা বলছিলো। কিন্তু ডা. মনিজা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বিনা চিকিৎসায় শেষ পর্যন্ত চলে গেল আমার ছেলেটি’- বলেই চিৎকার করে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন কছিমদ্দিন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকেও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন কছিমদ্দিন। তিনি বলেন, ‘স্কুলের যে খেলনা শ্লিপারটির নিচে আমার ছেলে চাপা পড়েছে, সেটি ঠিকমতো বসানো ছিলোনা। সিমেন্ট দিয়ে জায়গা বানিয়ে তারপর ক্লাম্প ও নাট দিয়ে ওই খেলনাটি বসানোর নিয়ম। কিন্তু, খেলনাটি ছিলো একদম আলগা। যে কারণে অন্য বাচ্চারা খেলার সময় আমার ছেলে ওখানে গিয়ে দাড়ানো মাত্রই তার উপর চাপা পড়ে খেলনাটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ একটু সচেতন হলেই, আমার বাবাটা আজ বেঁচে থাকতো এমন ঘটনা ঘটতো না।’
আলাদীপুর আরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শ্লিপার খেলনাটি আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত হাসান শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দিয়েছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার খেলনাটি স্কুলে এনে তারা রেখে গেছেন। স্কুল বন্ধের দিন হওয়াতে আমরা বিষয়টি জানতাম না। যে কারণে খেলনাটি ওভাবেই আলগা অবস্থায় ছিলো। সকালে স্কুলে এসে দেখি শিশুরা খেলছে। এ সময় আলিম পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল। হঠাৎ খেলনাটি উল্টে আলিমের ওপর পড়ে। এতে আলিম আহত হয়। আমরা তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগে ভর্তির শ্লিপ, এক্স-রে ও বিভিন্ন অজুহাতে সময় বিলম্ব করে চিকিৎসক মনিজা। ওই সময় নারী চিকিৎসক মনিজাকে বারবার ডাকলেও আলিমকে দেখতে আসেননি। এভাবে ৪০-৪৫ মিনিট জরুরি বিভাগের বেডে ছটফট করে মারা যায় আলিম। চিকিৎসকের অবহেলার কারণে শিশু আলিম মারা গেছে। চিকিৎসক মনিজার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আরএমও আলী আহসান তুহিন জানান, আজ সরকারী দুটি দিবস ছিলো যে কারনে আমি ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম। রোগী মৃত্যের কথাটি শোনার পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রতিবেদন আজকের দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক যদি দোশী হয় তবে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।